বিবর্ণ সবুজ - খুশী সরকার
Welcome to all Blog Visitors.
বিছানা থেকে হুড়মুড় করে উঠে তড়িৎ বেগে বাইরে এসেই শান্তি দেবী দেখল সারে ছটা বেজে গেছে। ইস দেরি হ্যে গেল। অর্কের ঘড়ে মশারি খুলতে খুলতে ডাকল ও অর্ক, ও অর্ক, ও-ঠো, অঠ বাবা, তারাতারি ওঠ। সারে ছটা বেজে গেছে কখন যে তোকে রেডি করবো ৭ টায় তো ভ্যান এসে যাবে। কইগো একটু ওঠোনা? অর্ককে রেডি করে দাও না? আমি ওর খাবার টা আর টিফিন তৈরি করি।
বিকাশ বাবু বাঙ্কের ম্যানেজার, সারাদিন নানা হিসাব পত্র নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। অফিস থেকে ফেরেন প্রায় সন্ধ্যায়। তারপর চা- টা খেয়ে টিভি তে খবর শুনেন। ছেলের সঙ্গে গল্প করেন।তা ছাড়া সকালে বাজার - ঘাট সব-ই তিনিই করেন। বিকাশ বাবুর বাবার বয়স হয়েছে তার উপর হাই প্রেসার, সুগার। নিয়মিত ওষুধের খবর রাখতে হয় তাকেই। মাও প্রায় অসুস্থ - ই। শরীর স্থূল হওয়ায় নানা রোগে
আক্রান্ত। আজ কোমড়ে ব্যথা তো কাল হাঁটুতে। চলাফেরা খুব একটা করতে পারে না- এই সব নানাকাজে ব্যস্ত বিকাশবাবু। কেবল রাতের ঘুমটুকু তেই বিশ্রাম পান। তাই সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে চান না আজ শান্তি দেবীর চিতকারে কান ঝালাপালা, না উঠে উপায় নেই গা মোড়া দিয়ে হাই তুলতে তুলতে বললেন - উঠি, উঠি, তুমি যাও খাবার তৈরি করো, আমি অর্ককে রেডি করে দিচ্ছি।
ওদিকে ছোট্ট অর্কের মুখে কালো মেঘ জমে থমথম দুই হাতে চোখ রগড়াতে রগড়াতে ঘড় থেকে বেড়িয়ে এল । বিকাশবাবু ডাকলেন, - 'অর্ক শিগগীর আয়। অই দেখ ভেন এসে গেল। স্কুল জাবিনা তখনও অর্কের চোখে ঘুমের রেশ কাটেনি। গুমের আবেশে গলা জড়ানো স্বরে বলে,- আজকে যাবনা বাবা। বিকাশবাবু সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেন- না, না, স্কুলে যেতে হবে চল কালকে বেশি করে ঘুমোস। কীই-বা বয়স অর্কের? মাত্র তিন বছর। মা দুষ্টুমির জন্য স্কুলে নিয়ে গেলে প্রধান শিক্ষিকা বলেছিলেন- এত কম বয়সে এখানে আমরা ভর্তি নিই না। কিন্তু অর্কের মা নাছোরবান্দা। বলেন - দিদিমনি, আমার ছেলেকে ভর্তি না নিলেও শুধু যাওয়া- আসা অনুমতি দেন। ও বড় চঞ্চল! স্কুলে আসলে ওর দুষ্টুমিও কমবে, অভ্যাসও গরে উঠবে। যাইহোক অর্ক ভর্তি নার্সারিতে।
পাসের ঘড়ে বসে ছিলেন ঠাকুরদা সুধীর বাবু এবং ঠাকুমা সবিতা দেবী। সুধীর বাবু ছিলেন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং সবিতা দেবী ছিলেন প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা। এখন অবসর নিয়ে দুজনেই থাকেন ছেলের সঙ্গে। ঠাকুরদা শুয়ে শুয়ে বললেন, ইস, শুরু হল বাচ্চাটার উপর অত্যাচার। ওই একটুখানি তো বাচ্চা, ওর কি আর এত তাড়াতাড়ি উঠতে ইচ্ছা করে। ঠাকুমাও সায় দিলেন সেই কথাতে এবং বললেন হ্যাঁ, তাইতো।
কিন্তু আমড়া যখন মানুষ করেছি তখন সময় ছিল অন্য। তখন মানুষের মধ্যে এত ব্যস্ততা ছিল না বল। পড়াশুনার জন্য এত করাকরিও করতে হয় নি। ও আপন মনে যা পড়েছে তা-ই হয়েছে। সবিতাদেবি সুধিরবাবুকে উদ্দেশ্য করে বললেন,- তোমার মনে পড়ছে? আমাদের বাড়ির সামনের মাঠটায় কত ছেলে-পেলে খেলতে আসতো। ইস সারা বিকাল ধরে কি হই হট্টগোল তাদের আবার একেকটা দলও ছিল।
কোনো দল ডাংগুলি খেলে তো, অন্য দল বুড়ি ছোঁয়াছুয়ি। কত রকম খেলা!
জানো যেদিন তোমার স্কুল থেকে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যেত সেদিন অনেকক্ষণ বসে থাকতাম বারান্দায়। স্কুলের খিটমিটে মেজাজটা একেবারে ঠাণ্ডা জল হয়ে যেত। কখনো মনে হতো আমিও ওদের সঙ্গে যোগ দিই। পরক্ষনেই নিজের দিকে তাকিয়ে মনে পরতো অদের মতো আমি তো আর ছোট নেই। এইভাবে ভাবতে ভাবতে কখন যে বিকেল গড়িয়ে জেত সন্ধ্যায়, বূঝতেই পারতাম না।
সুধীরবাবু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, - আর কি সেদিন আছে! এখন তো শুধু ইঁদুর দৌড় , কার আগে কে যায়! বলতে বলতে তিনিও উঠলেন তখন অর্ক স্কুলের ভ্যানে বসে। শান্তিদেবী তাড়াতাড়ি বই-এর ব্যাগ আর টিফিন বক্স হাতেকরে ভ্যানের চালকের হাতে দিচ্ছেন এমন সময় দাদুকে দেখেই হাত নেড়েই বললো – টাটা দাদু সুধীর বাবুও পাল্টা হাত নেড়ে টাটা দিয়ে বললেন স্কুলে দুষ্টুমি করোনা
দাদুভাই, বন্ধুদের সঙ্গে মিলেমিশে খেলবে।
ভ্যান চলে গেল উঃ বলে শান্তিদেবী বসে পড়লেন মাটিতে। বাচাগেল একটু দেরি হলেই আর পারা যায় না। শাশুড়ীর দিকে মুখ করে বললেন,- আপনারা চা খেয়ে যান। রাস্তার দিকে তাকিয়ে মুখটা ব্যাজার করে বললো এখনো কাজের মাসিটা এলোনা? বড্ড বেশী দেরি করে আজকাল, নাঃ একে আর রাখা যাবেনা, সব কাজ বাকি। কখন রান্না বসাই ৯টা বাজতেই তো ছোটাছুটি লেগে যাবে বলতেই কাজের মাসি এলো।
---- কিগো মাসি এত দেরি করলে যে আর একটু সকাল সকাল এসো। নাও নাও তারাতারা রান্নাঘরটা পরিস্কার করে ফেলো।
---- ঘড়িতে ৯টা বাজলো বিকাশবাবু স্নান সেরে ভাত খেতে বসলেন টেবিলে – “তাড়াতাড়ি ভাত দাও” বলে রান্নাঘ্রের দিকে তাকালেন শান্তিদেবী ভাতের থালা সামনে এগিয়ে দিয়ে বললেন রুমাল, ব্যাগ নিয়েছো। ভাত চিবোতে চিবোতেই মাথা নাড়লেন। এমন সময় ভ্যান থেকে নামলো অর্ক।
বাবা, তুমি অফিস জাচ্ছো বলেই দৌড়ে ঢুকল ঘরে ব্যাগ পড়ে থাকলো বাইরে। জামা মোজা পরেই বসে পড়লো কার্টুন দেখতে। মা রান্নাঘর থেকে ডেকে বললো জামা মোজা খোল বাবা, হাত পা ধুয়ে এখানে আয় কিছু খেয়ে নে। অর্কের মুখে রা- নেই । কিছুক্ষন পর মা আবার ডাকলেন কিরে, এলিনা? তাও উত্তর নেই। শান্তিদেবী এবার নিজেই ঘরে গেলেন দেখলেন অর্ক নিস্পলক চেয়ে আছে টিভির দিকে। মায়ের ঘড়ে ঢোকার শব্দ শুনেই বললো মা দেখো দেখো, বাবলি ডল কেমন করে চুমু খাচ্ছে। মা চোখ বড় বড় করে তাকালো অর্কের দিকে, আর বললো তুই কোথাই শিখলি এই কথা। অর্ক সহজ ভাবে উত্তর দিল,- আমার বন্ধু রিয়া বলেছে একটি ছেলে একটি মেয়ের মুখে মুখ রাখলে তাকে চুমু খাওয়া বলে। আচ্ছা, আচ্ছা চল এবার একটু খেয়ে নিবি।
---- ওমা আর একটু দেখিনা একটু পরেই যাবো, আচ্ছা বলেই শান্তিদেবী চলে গেলেন রান্নাঘরে।
---- বিকেলে শাশুড়ি বউ দুজনেই গল্প করছিলেন বাইরের বারান্দায়। সামনে রাস্তার মোড়ে কতকগুলি বস্তির ছেলে খেলা করছিল ইচিং বিচিং।
হঠ্যাত দৌরে এল অর্ক মায়ের গলা জড়িয়ে আদর করে বললো, আমি ওদের সঙ্গে খেলবো মা! – না, তুই ওখানে যাবি না জানিস না ওরা বস্তির ছেলে, ওরা তো পড়াশুনা করে না, ওদের সঙ্গে মিশতে আছে। হঠ্যাত চমকে উঠে বললো ৫টা বেজে গেছে না? তোর এখন আর্টের মাস্টারমশাই আসবেন। যা যা তাড়াতাড়ি আর্টের খাতা রঙ পেনসিল নিয়ে বস। আগের দিনের ছবিটায় রঙ ভরে ফেল শিগগীর।
অর্ক অনিচ্ছা সত্যেও হাত কাচুমাচু করতে করতে চলে গেল । সারে পাঁচটায় ফিরে এলেন বিকাশবাবু। উঃ কী কাজের চাপ! বলে বসে পড়লেন সোফায়। তারপর চুপচাপ থাকলেন কিছুক্ষন। পড়ে অফিসের জামা কাপড় ছেড়ে হাত পা ধুয়ে বসে চা খাচ্ছেন এমন সময় ঘড়ে ঢুকলেন মা সবিতাদেবী।
---- হ্যাঁরে খোকা, তোর আজকাল খুব কাজের চাপ পরেছে নারে?
---- কেন মা?
---- এই যে আজকাল প্রায় দেরি করে ফিরছিস তাই জিজ্ঞাসা করলাম।
---- মা, দেখোতো তোমার বউমা কোখায় একটু ডেকে দাও তো। আর হ্যাঁ বাবা কোখায় গো। বাবা কি আর আগের ওই বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে যায়?
----- নারে খোকা কদিন হল আর যায়না দেখি। কম্পিউটারের ঘড়ে বসে থাকে।
----- কি করে ওখানে?
----- কি জানি ওই যে নেট (Net)নাকি বলে, ওখানে কি সব মজার মজার খবর কাকে নাকি পাঠায় অত সব জানিনা তবে শুনেছি খুব নাকি মজার ব্যাপার আর নেশার। আর একটা কথা জানিস? তোর ছেলেও তো দাদুর সঙ্গে অনেকক্ষণ থাকে। নাতিকে কোলে নিয়ে কি সব শেখায়।
---- হাসতে হাসতে বিকাশবাবু বলেন তাই নাকি? বাঃ ভালোয় তো! বাবার তাহলে আর সময় কাটাতে অসুবিধা হয় না। দাদু নাতিতে ভালোই জমেছে।
সন্ধ্যায় চা খাওয়া সেরে বিকাশবাবু আর শান্তিদেবী দেখছিলেন একটি সিনেমা স্টার মুভিজে। অর্ক পড়ছিল পাসের ঘড়ে গৃহ শিক্ষকের কাছে। গৃহ শিক্ষক যেতেই অর্ক দৌড়ে এল মায়ের কাছে।
---- মা তোমরা সিনেমা দেখছো? ঠিক সেই সময় টিভির স্ক্রিনে একটি নব বিবাহিত বউ স্বামীর কাছে বসেছিল লজ্জায় রাঙা হয়ে আর তার চিবুক ধরে আদর করছিল স্বামীটি। টিভির দিকে তাকিয়েই হঠাৎ অর্ক বলে উঠলো, আমি জা-নি এর পড়ে কি হবে? মা তো তেরে গেলেন অর্কের দিকে। ওরে দুষ্টু ছেলে, খুব পেকে গেছো না? বলতো কি হবে? সঙ্গে সঙ্গে অর্ক মুচকি হেসে বলে ওরা এখন শোবে। আমার বন্ধু বলেছে বর-বউ এক সঙ্গে ঘুমায়। ওদিকে টিভিতেও দেখাগেল চাদর মুরি দিয়ে শুয়ে পড়লো। অর্ক হাততালি দিয়ে বললো দেখলে তো আমি সব জানি।
---- মা তো লজ্জায় রাগে তর্জনী তুলে শাসনের সুরে বলে তুই গেলি এখান থেকে? গেলি পড়ার ঘড়ে? দেখিস কাল স্কুলে পড়া না পারলে মিস তোকে কেমন বকা দেই। অমনি মুখ ব্যাজার করে অর্ক চলে যায় পড়ার ঘড়ে। অর্ক যেতেই শান্তিদেবী কনুয়ের গুঁতো মেরে বিকাশবাবুকে বলেন, দেখলে তো, ছেলে কেমন পেকে গেছে। আজকালকার বাচ্চারা যেন আটেই পা দিচ্ছে ১৪তে।
---- নানা তুমি যতটা ভাবছো ততটা নয়, ওরা যা দেখে তা-ই বলে অতো বোঝে-টোঝে না, ছাড়ো ও সব কথা, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলেন, সারে দশটা বাজে। খিদে পেয়েছে? খাওয়া বের করো।
শান্তিদেবী রান্না ঘরে গেলেন ভাত তরিতরকারি যা কিছু সব টেবিলে রাখলেন কিন্তু কেউ আসে না অখান থেকেই দাকলেন অ-র্ক বাবাকে খেতে আস্তে বল তবুও কেউ আসেনা তখন বিরক্তির সুরে বললেন তোমরা কি খাবে না কি না খেয়ে শুয়ে পরবে, তারপর একে একে সবাই এল। সবার খাওয়া হল ১১টায় গুমিয়ে পরলো নিজ নিজ ঘরে।
হটাৎ মাঝরাতে শান্তিদেবী কান্নার আওয়াজ পেলেন। ধরাস করে উঠলো বুকটা! বিছানা থেকেই সুইচ টিপলেন, অর্কর ঘড়ের সামনে গেলেন কেমন যেন অজানা আশঙ্কায় কেঁপে উঠলেন, দরজায় কান পেতে শুনলেন হ্যাঁ অর্কেরই কান্না, নিমেষে দরজা ঠেলে ঢুকলেন অর্ককে জড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, কেন কাঁদছিস, বাবা? কী হয়ছে? ভয় পেয়েছিস?
----- আমার ভয় করছে মা! আমি তোমার কাছে শোব।
----- কেন এখানে ভয় করছে?
----- হ্যাঁ মা, আঙ্গুল তুলে দেওয়ালের দিকে দেখিয়ে দেয় অর্ক আর চোখ বুজে গুটিয়ে যায় মায়ের কোলে। দেওয়ালের দিকে তাকিয়েই হেঁসে উঠেন শান্তিদেবী। পাগল ছেলে আমার, ও তো কক্রোচ ওকে দেখে কি কেউ ভয় পায়? আচ্ছা চল, আমার কাছে শুবি। নিজের ঘরে নিয়ে এসে শোয়ালেন একপাশে নিজে শুলেন বিকাশবাবুর কাছে। কিছুক্ষন পর ঘুমিয়ে পড়লো অর্ক।
পরেরদিন স্কুলের ভ্যান এল একটু দেরিতে শান্তিদেবী সেদিন একাই অর্কের ঘুম ভাঙিয়ে রেডি করালেন। খাবারও তৈরি করলেন, টিফিন বক্সে টিফিন ভরে স্কুলে পাঠালেন। বিকাশবাবু চা খেয়ে বাজারে গেলেন। বাজার থেকে নিয়ে এলেন মাছ - মাংস দুটোই, বাজার দেখে শান্তিদেবী রেগে লাল যেন চৈত্রের আগুন ঝরতে লাগলো। কিন্তু কী করা যায়? ও দিকে নয়টার মধ্যে রান্না শেষ করতে হবে। অগত্যা রান্না ঘরে গেলেন শান্তিদেবী। রান্না শেষ করে ১০টায় বিকাশবাবুকে খেতে দিলেন।
তারপর বিকাশবাবুর ব্যাগ-রুমাল হাতের কাছে রাখতেই স্কুল ভ্যান আসার আওয়াজ পেলেন। ওই বুঝি অর্ক এল? দরজার দিকে তাকাতেই অর্ক ব্যাগ হাতে করে আসছে। কারো দিকে না তাকিয়েই ঢুকে পড়লো ঘরে এবং রিমোট হাতে কার্টুন দেখতে শুরু করলো এমন সময় বাড়িতে এলেন দুর-আত্মীয়।
শান্তিদেবী তার সঙ্গে গল্প করতে করতে ডাকলেন, অর্ক আয় দেখ কে এসেছে? আবার শুরু করলেন গল্প অনেক্ষন পর খেয়াল হল, অর্ক তো এল না। আসছি বলে নিজেই গেলেন ঘরে, গিয়েই চক্ষু চড়ক গাছ!। টিভি চলছে কিন্তু অর্ক নেই কোথায় গেল ছেলেটা বলেই তড়িৎ বেগে গেলেন শাশুড়ির ঘড়ে। মা আপনার নাতি এখানে? সবিতাদেবী তখন গল্পের বই পড়ছিলেন। বইয়ের দিক থেকে মুখ তুলে চাইলেন
বউমার দিকে।
---- এখানে তো আসে নি বৌমা? কেন ঘরে নেই? কোথায় গেল? চল চল বাইরেটা দেখি। শান্তি দেবী কাঁদো কাঁদো হয়ে বললেন। অতো বাইরে যায় না, কারো সঙ্গে খেলেওনা। অন্যঘরে নেট নিয়ে বসেছিলেন সুধীরবাবু, সেখানেও শান্তদেবী গেলেন, এখানে অর্ক আছে?
---- নাতো! কেন কী হয়েছে?
---- ও ঘড়ে নেই, কোথাও দেখতে পাচ্ছিনা
হুলুস্থুলুস পরে গেল বাড়িতে। শান্তিদেবী কাঁদতে কাঁদতে পুকুরের দিকে গেল। ঠাকুমা গেলেন রাস্তার দিকে। ঠাকুদ্দা গেলেন তার বন্ধুদের বাড়িতে খোঁজ নিতে। এক সময় সবাই ফিরে এল কিন্তু কোথাও খোজ পাওয়া গেল না। সবাই হতাশ হয়ে বসে পড়ল। হঠাৎ সবিতাদেবী বললেন, আচ্ছা বৌমা ওই পাড়ায় অর্কর এক বান্ধবীর বাড়ি না? ওই যে কি নাম, প্রিয়া নাকি, ওদের বাড়িতে খোজ নিলে হয়না?
---- হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক বলেছেন তাড়াতাড়ি পরনের শাড়ীটা পাল্টে উরধশ্বাসে ছুটলেন প্রিয়াদের বাড়ি। ও প্রিয়ার মা বলে দরজা থেকে ডাকতে লাগলেন, কিছুক্ষন পর প্রিয়ার মা বাইরে এসে দেখে শান্তিদেবী, চমকে উঠে জিজ্ঞাসা করেন, কি হয়েছে গো?
----- আমার ছেলে অর্ক তোমাদের বাড়িতে এসেছে? তোমার মেয়ে কোথায়?
----- তা তো জানিনা? আর প্রিয়াতো ঘড়ে খেলছে! আসলে কি হয়েছে জান আমার এক বোন এসেছে তার সঙ্গে গল্প করছি অর্ক আসেছে কিনা খেয়াল করি নি।
----- দেখনা একটু ঘড়ে গিয়ে?
----- প্রিয়ার মা সঙ্গে সঙ্গে ঘড়ে গেল আবার তৎক্ষণাৎ হাসতে হাসতে শান্তিদেবীকে হাতের ইশারা করে, শান্তিদেবীতো ভয়ে আতঙ্কিত কাঁদো কাঁদো হয়ে বলেন বলোনা এসেছে কিনা?
----- এসোই না একবার ঘড়ে দেখ কি কাণ্ড ঘড়ে। হন হন করে ঘড়ে ঢুকলেন দেখে অবাক প্রিয়া আর অর্ক চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে পাশাপাশি। শান্তিদেবী রাগের স্বরে দাকলেন অর্ক, তুই এখানে? আর তোকে খুজে মরছি আমরা ওদিকে।
----- আমি প্রিয়ার সঙ্গে এখানে খেলতে এসেছি, আমরা বর-বউ খেলছি।
----- কপালে চোখ তুলে শান্তি দেবী ও প্রিয়ার মা একই সঙ্গে বলে, "এ কী অবস্থা!"
Welcome to all Blog Visitors.
|
No comments:
Post a Comment
Thanks for your valuable comment